বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম।।
গ্রামঃ মানব সমাজের আদি সংগঠন হচ্ছে গ্রাম। গ্রামকে কেন্দ্র করেই প্রাচীন বাংলার কৃষিনির্ভর সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটেছে। গ্রাম বলতে বোঝায় জনবসতির সমষ্টি, যেখানে মানুষ স্থায়ীভাবে ঘরবাড়ি তৈরী করে কৃষিভিত্তিক জীবিকা নির্বাহ করে।
গ্রামীণ সম্প্রদায়ঃ গ্রামের বসতিকে গ্রামীণ সম্প্রদায় বলা হয়।
গ্রামীণ সম্প্রদায়ের নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে। ইহার রয়েছে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিন্মের মতো হয়ে থাকেঃ
• কৃষিঃ গ্রামীণ সম্প্রদায়ের সদস্যরা মূলত কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। কৃষিকে কেন্দ্র করেই গ্রামগঞ্জের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিচালিত হয়ে থাকে।
• সম্প্রদায়গত চেতনাঃ গ্রামীণ সম্প্রদায়ের সকল সদস্যদের মধ্যে এক সমষ্টিগত চেতনা পরিলক্ষিত হয়। গ্রামের প্রতিটি সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে গভীর ঐক্যবোধ দেখা যায়।
• যৌথ পরিবারঃ গ্রামীণ সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো যৌথ পারিবারিক ব্যবস্থা। একান্নবর্তী যৌথ পারিবারিক ব্যবস্থা এখনো গ্রামে বিদ্যমান; যার কারণ হলো গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি।
• সরলতাঃ গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মধ্যে সরলতা বহুলাংশে বিদ্যমান। সাধারণভাবেই তারা সহজসরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। তাদের জীবনধারা সহজ, স্বাচ্ছন্দ্য ও শান্তিপূর্ণ।
• প্রতিবেশী-সুলভ আচরণঃ গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রতিবেশি সুলভ আচরণ পরিলক্ষিত হয়। গ্রামের অধিবাসীরা একে অপরকে চেনে ও জানে, পরস্পরের খোঁজ-খবর রাখে, তারা পরস্পরের সুখে-দুঃখে পাশে এসে দাঁড়ায়।
• ধার্মিক মনোভাবঃ গ্রামীণ সম্পদায়ের সদস্যরা সাধারণত ধার্মিক মনোভাবের হয়ে থাকে। গ্রামীণ সম্প্রদায়ের সদস্যদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনের সকল ক্ষেত্রে ধর্ম এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান অবিসংবাদিত প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া রেখে থাকে।
প্রাচীন বাংলার গ্রামীণ ইতিহাসে কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য দেখা যায়;
• বসবাসের স্থানঃ প্রথম থেকেই মানুষ বন্যা প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে উঁচু ভূমিতে বসবাস শুরু করে। তাই, নিন্মভূমি উঁচু করার জন্য মাটি খুঁড়ে পুকুর তৈরী করে। পুকুর থেকে তারা প্রয়োজনীয় পানি ও মাছের যোগান পেতো। তৎকালীন রাজা বা ধনশালীরা বড় আকারের দিঘী খনন করতো। বাড়ি গুলো তৈরী হতো দক্ষিণমুখী যেনো প্রয়োজনীয় আলো-বাতাসের চাহিদা পূরণ হয়। কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল পানি, তাই প্রাচীনকাল থেকেই গ্রামগুলোর অবস্থান পরিলক্ষিত হয় বিশাল কোনো জলাশয়, নদনদী বা খালবিলের নিকট।
• সীমানা ও আয়তনঃ প্রাচীনকালে নদী, পাহাড়, সেতুবন্ধ-ইত্যাদি প্রাকৃতিক অবয়বকে ঘিরে গ্রামের সীমানা নির্ধারিত হতো।রাস্তাঘাট, মাঠ, জঙ্গল-ইত্যাদি ঘিরেও সীমানা নির্ধারিত হতো।
• আকারঃ কৌটিল্য এর মতে, "একশ থেকে পাঁচশ কৃষক পরিবার নিয়ে দুই ক্রোশব্যাপী সীমানায় গ্রামের পত্তন হবে।" আপস্তম্ভ ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী, "দুই-তিন ঘর থেকে আরম্ভ করে যে কোনো সংখ্যক বাড়ি নিয়ে একখানা গ্রাম গড়ে উঠতে পারে।" উদাহরণঃ তেঘারিয়া, পাঁচঘাড়িয়া, সাতঘাড়িয়া গ্রাম - ইত্যাদি।
• রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোঃ প্রাচীন গ্রামগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণ, স্বনির্ভর ও স্বভোগী ছিল, অর্থাৎ গ্রামের প্রয়োজনীয় সবকিছু তারা নিজেরাই উৎপাদন করতো। বাইরের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে তারা স্বাধীন ছিল। যেসব গ্রাম কোনো গুরুত্বপূর্ণ রাজপথ বা প্রশস্ত নদীর কিনারে ছিল সেসব গ্রাম রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো। সেসব গ্রামে কখনো কখনো কোনো আমলার স্থায়ী দফতরও থাকতো।
• ভূমির স্বত্বঃ প্রকৃতিপ্রদত্ত সম্পদ ভূমিকে নিয়েই বিকাশ ঘটেছে ভূমির স্বত্ব বিষয়টি। প্রাথমিক পর্যায়ে ভূমির স্বত্ব ছিল গোষ্ঠীগত। প্রথা অনুযায়ী, সমস্ত জমি ছিল সমাজের। ব্যাডেন পাওয়েল বলেন, "কর্ষিত জমির এক-তৃতীয়াংশের উপর গোষ্ঠীগত মালিকানা থাকলেও দুই-তৃতীয়াংশের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা প্রযোজ্য ছিল। কাল মার্কসের মতেও, বৃহত্তর ভারতের গ্রামের জমি যৌথ মালিকানায় ভোগ করা হতো। বাস্তুভূমি, খিলভূমি এবং ক্ষেত্রভূমি - এ তিনটি পর্যায়ে প্রাচীন গ্রামের ভূমির বিন্যাসে বিদ্যমান ছিল।
• গ্রামের বৃত্তিঃ প্রাচীনকালে এক এক বৃত্তি আশ্রয় করা সমশ্রেণীর লোকদের নিয়ে একটি পাড়া গঠিত হতো। এ ধরণের পাড়া বা গ্রাম প্রাচীন কৌম সমাজেরই দান। প্রাচীনকালে ৩ ধরণের গ্রাম পাওয়া যায়। যথাঃ-
১) মিশ্রগ্রামঃ এ গ্রামের আদিবাসীদের পেশা বা বৃত্তি ছিল মূলত কৃষি। মিশ্রগ্রামকে চাষি গ্রামও বলা হয়।
২) শিল্পগ্রামঃ শিল্প গ্রাম বলতে কুমার, কামার, তাঁতি, ছুতার - প্রভৃতি শিল্পী বা কারিগরদের নিয়ে গঠিত গ্রামকে বুঝানো হয়।
৩) প্রান্তগ্রামঃ লোকালয় থেকে অনেক দূরে অবস্থিত গ্রামকে বলা হতো প্রান্তগ্রাম। মূলত অনেকের মতে, এ ধরনের গ্রাম ছিল অনিশ্চিত ও নিরাপত্তাহীন।
• সামাজিক কাঠামো ও এর পরিসরিক বিন্যাসঃ অতীতে উপমহাদেশের গ্রাম তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল। গ্রামের কেন্দ্র ছিল প্রাচীরবেষ্টিত অবস্থায়। প্রাচীরের বাইরে গ্রামের মানুষ একসাথে জমি চাষ করতো।এছাড়া একখন্ড জমি প্রত্যেক পরিবারের জন্য বন্টন হতো।
গ্রামঃ মানব সমাজের আদি সংগঠন হচ্ছে গ্রাম। গ্রামকে কেন্দ্র করেই প্রাচীন বাংলার কৃষিনির্ভর সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটেছে। গ্রাম বলতে বোঝায় জনবসতির সমষ্টি, যেখানে মানুষ স্থায়ীভাবে ঘরবাড়ি তৈরী করে কৃষিভিত্তিক জীবিকা নির্বাহ করে।
গ্রামীণ সম্প্রদায়ঃ গ্রামের বসতিকে গ্রামীণ সম্প্রদায় বলা হয়।
গ্রামীণ সম্প্রদায়ের নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে। ইহার রয়েছে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিন্মের মতো হয়ে থাকেঃ
• কৃষিঃ গ্রামীণ সম্প্রদায়ের সদস্যরা মূলত কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। কৃষিকে কেন্দ্র করেই গ্রামগঞ্জের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিচালিত হয়ে থাকে।
• সম্প্রদায়গত চেতনাঃ গ্রামীণ সম্প্রদায়ের সকল সদস্যদের মধ্যে এক সমষ্টিগত চেতনা পরিলক্ষিত হয়। গ্রামের প্রতিটি সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে গভীর ঐক্যবোধ দেখা যায়।
• যৌথ পরিবারঃ গ্রামীণ সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো যৌথ পারিবারিক ব্যবস্থা। একান্নবর্তী যৌথ পারিবারিক ব্যবস্থা এখনো গ্রামে বিদ্যমান; যার কারণ হলো গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি।
• সরলতাঃ গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মধ্যে সরলতা বহুলাংশে বিদ্যমান। সাধারণভাবেই তারা সহজসরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। তাদের জীবনধারা সহজ, স্বাচ্ছন্দ্য ও শান্তিপূর্ণ।
• প্রতিবেশী-সুলভ আচরণঃ গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রতিবেশি সুলভ আচরণ পরিলক্ষিত হয়। গ্রামের অধিবাসীরা একে অপরকে চেনে ও জানে, পরস্পরের খোঁজ-খবর রাখে, তারা পরস্পরের সুখে-দুঃখে পাশে এসে দাঁড়ায়।
• ধার্মিক মনোভাবঃ গ্রামীণ সম্পদায়ের সদস্যরা সাধারণত ধার্মিক মনোভাবের হয়ে থাকে। গ্রামীণ সম্প্রদায়ের সদস্যদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনের সকল ক্ষেত্রে ধর্ম এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান অবিসংবাদিত প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া রেখে থাকে।
প্রাচীন বাংলার গ্রামীণ ইতিহাসে কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য দেখা যায়;
• বসবাসের স্থানঃ প্রথম থেকেই মানুষ বন্যা প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে উঁচু ভূমিতে বসবাস শুরু করে। তাই, নিন্মভূমি উঁচু করার জন্য মাটি খুঁড়ে পুকুর তৈরী করে। পুকুর থেকে তারা প্রয়োজনীয় পানি ও মাছের যোগান পেতো। তৎকালীন রাজা বা ধনশালীরা বড় আকারের দিঘী খনন করতো। বাড়ি গুলো তৈরী হতো দক্ষিণমুখী যেনো প্রয়োজনীয় আলো-বাতাসের চাহিদা পূরণ হয়। কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল পানি, তাই প্রাচীনকাল থেকেই গ্রামগুলোর অবস্থান পরিলক্ষিত হয় বিশাল কোনো জলাশয়, নদনদী বা খালবিলের নিকট।
• সীমানা ও আয়তনঃ প্রাচীনকালে নদী, পাহাড়, সেতুবন্ধ-ইত্যাদি প্রাকৃতিক অবয়বকে ঘিরে গ্রামের সীমানা নির্ধারিত হতো।রাস্তাঘাট, মাঠ, জঙ্গল-ইত্যাদি ঘিরেও সীমানা নির্ধারিত হতো।
• আকারঃ কৌটিল্য এর মতে, "একশ থেকে পাঁচশ কৃষক পরিবার নিয়ে দুই ক্রোশব্যাপী সীমানায় গ্রামের পত্তন হবে।" আপস্তম্ভ ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী, "দুই-তিন ঘর থেকে আরম্ভ করে যে কোনো সংখ্যক বাড়ি নিয়ে একখানা গ্রাম গড়ে উঠতে পারে।" উদাহরণঃ তেঘারিয়া, পাঁচঘাড়িয়া, সাতঘাড়িয়া গ্রাম - ইত্যাদি।
• রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোঃ প্রাচীন গ্রামগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণ, স্বনির্ভর ও স্বভোগী ছিল, অর্থাৎ গ্রামের প্রয়োজনীয় সবকিছু তারা নিজেরাই উৎপাদন করতো। বাইরের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে তারা স্বাধীন ছিল। যেসব গ্রাম কোনো গুরুত্বপূর্ণ রাজপথ বা প্রশস্ত নদীর কিনারে ছিল সেসব গ্রাম রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো। সেসব গ্রামে কখনো কখনো কোনো আমলার স্থায়ী দফতরও থাকতো।
• ভূমির স্বত্বঃ প্রকৃতিপ্রদত্ত সম্পদ ভূমিকে নিয়েই বিকাশ ঘটেছে ভূমির স্বত্ব বিষয়টি। প্রাথমিক পর্যায়ে ভূমির স্বত্ব ছিল গোষ্ঠীগত। প্রথা অনুযায়ী, সমস্ত জমি ছিল সমাজের। ব্যাডেন পাওয়েল বলেন, "কর্ষিত জমির এক-তৃতীয়াংশের উপর গোষ্ঠীগত মালিকানা থাকলেও দুই-তৃতীয়াংশের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা প্রযোজ্য ছিল। কাল মার্কসের মতেও, বৃহত্তর ভারতের গ্রামের জমি যৌথ মালিকানায় ভোগ করা হতো। বাস্তুভূমি, খিলভূমি এবং ক্ষেত্রভূমি - এ তিনটি পর্যায়ে প্রাচীন গ্রামের ভূমির বিন্যাসে বিদ্যমান ছিল।
• গ্রামের বৃত্তিঃ প্রাচীনকালে এক এক বৃত্তি আশ্রয় করা সমশ্রেণীর লোকদের নিয়ে একটি পাড়া গঠিত হতো। এ ধরণের পাড়া বা গ্রাম প্রাচীন কৌম সমাজেরই দান। প্রাচীনকালে ৩ ধরণের গ্রাম পাওয়া যায়। যথাঃ-
১) মিশ্রগ্রামঃ এ গ্রামের আদিবাসীদের পেশা বা বৃত্তি ছিল মূলত কৃষি। মিশ্রগ্রামকে চাষি গ্রামও বলা হয়।
২) শিল্পগ্রামঃ শিল্প গ্রাম বলতে কুমার, কামার, তাঁতি, ছুতার - প্রভৃতি শিল্পী বা কারিগরদের নিয়ে গঠিত গ্রামকে বুঝানো হয়।
৩) প্রান্তগ্রামঃ লোকালয় থেকে অনেক দূরে অবস্থিত গ্রামকে বলা হতো প্রান্তগ্রাম। মূলত অনেকের মতে, এ ধরনের গ্রাম ছিল অনিশ্চিত ও নিরাপত্তাহীন।
• সামাজিক কাঠামো ও এর পরিসরিক বিন্যাসঃ অতীতে উপমহাদেশের গ্রাম তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল। গ্রামের কেন্দ্র ছিল প্রাচীরবেষ্টিত অবস্থায়। প্রাচীরের বাইরে গ্রামের মানুষ একসাথে জমি চাষ করতো।এছাড়া একখন্ড জমি প্রত্যেক পরিবারের জন্য বন্টন হতো।
অসাধারণ
ReplyDelete